বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ২০২৩ সালের নতুন শিক্ষাক্রম বিস্তারিত
প্রতিটি দেশেই নিজস্ব শিক্ষা নীতি রয়েছে। সেই শিক্ষানীতির আওতায় থেকে শিক্ষাক্রম নানাবিধ বিষয়। আমাদের দেশের শিক্ষাক্রম ছাত্র-ছাত্রীদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে শিখাবে । ৮ম শ্রেণী শেষে ছাত্রছাত্রী তার মেধার উপর ভিত্তি করে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে শিখবে। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ২০২৩ সালের নতুন শিক্ষাক্রম বিস্তারিত চলে এসেছে। ২০২৩ সালের শিক্ষাক্রমে আগের মত পরীক্ষা থাকবে না।নতুন শিক্ষা কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে কিভাবে আসুন জেনে নেই।
নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণীর আগে কোন বিভাগ থাকবে না মানে (বিজ্ঞান বিভাগ, মানবিক বিভাগ, ও কমার্স বিভাগ) ইত্যাদি বিভাগ গুলো থাকবে না। সকল ছাত্র-ছাত্রী একই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করবে।নতুন শিক্ষা কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে কিভাবে আসুন জেনে নেই।
ভূমিকা
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ২০২৩ সালের নতুন শিক্ষাক্রমে কি কি নতুন শিক্ষাক্রম প্রয়োগ করা হয়েছে আসুন জেনে নেই। এই শিক্ষাক্রমে আপনাকে কেউ পড়ায়ে দিবে না, বা আপনাকে শিখিয়ে দিবে এমনটা হবে না ।বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে ছাত্র-ছাত্রী নিজে নিজে সবকিছু শিখবে ।
একজন শিক্ষক হবে ছাত্র-ছাত্রীর সহায়তাকারী। তিনি একটা বিষয় শিখিয়ে দিবেন না বরং তিনি একটা বিষয় কিভাবে শিখতে হয় সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।
- বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ২০২৩ সালের নতুন শিক্ষাক্রম বিস্তারিত
- নতুন শিক্ষা কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে কিভাবে
- শিখন কালীন মূল্যায়ন কাকে বলে
- সামষ্টিক মূল্যায়ন কি
- মাধ্যমিক পর্যায়ে যে দশটি বিষয় থাকবে
- নতুন শিক্ষা কারিকুলামে ত্রিভুজকে যে ভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে
- নতুন শিক্ষা কারিকুলামে মূল্যায়ন বৃত্তকে যে ভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে
- নতুন শিক্ষা কারিকুলামে মূল্যায়ন চতুর্ভুজকে যে ভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে
- মন্তব্য
বাংলাদেশের শিক্ষানীতিতে ২০২৩ সালের নতুন শিক্ষাক্রম বিস্তারিত
বাংলাদেশের শিক্ষানীতিতে ২০২৩ সালের নতুন শিক্ষাক্রম বিস্তারিত তথ্যে কি কি বাস্তবায়ন হচ্ছে আসল জেনে নেই।
১। ২০২৩ সাল শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন শিক্ষাক্রম,১ম,২য় ও ষষ্ঠ, সপ্তম শ্রেণীতে বাস্তবায়ন হচ্ছে।
২। ২০২৪ সাল শিক্ষাবর্ষে ৩য়, ৪র্থ ও৮ম,৯ম শ্রেণীতে বাস্তবায়িত হচ্ছে ।
৩। ২০২৫ সাল শিক্ষাবর্ষে ৫ম,ও১০ম শ্রেণীতে বাস্তবায়িত হবে।
৪। ২০২৬ সাল শিক্ষাবর্ষে শুধু একাদশ শ্রেণীতে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
৫। ২০২৭ সাল শিক্ষাবর্ষে শুধু দ্বাদশ শ্রেণীতে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
৬। প্রাক প্রাথমিকে থাকছে না কোন সরকার নির্ধারিত বই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াবেন তাদের নিজেদের মতো করে।
৭। তৃতীয় শ্রেণীর পর্যন্ত থাকছে না কোন পরীক্ষা শ্রেণীতে শেখানোর উপর ভিত্তি করে হবে শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন।
৮। চতুর্থ শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়তে হবে ৮টি বিষয়।
৯। পরীক্ষার বাইরে মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন ও সামষ্টিক উপায়ে।
১০। জিএসসি/পিএসসি /জিডিসি ও পিইসি/ইবতেদায়ী নামের কোন পাবলিক পরীক্ষা থাকবে না।
১১। চতুর্থ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিখন কালীন মূল্যায়ন হবে ৪০ শতাংশ আর সমষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ।
১২। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিখন কালীন মূল্যায়ন হবে ৩০ শতাংশ আর সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৭০ শতাংশ।
১৩। নবম ও দশম শ্রেণীর বই মিলিয়ে হবে না এসএসসি পরীক্ষা শুধু দশম শ্রেণীর বই ও সিলেবাস অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে এসএসসি পরীক্ষা।
১৪। মাধ্যমিক পর্যায়ে থাকছে না আলাদা আলাদা তিনটি বিভাগ ।যেমন,( বিজ্ঞান বিভাগ মানবিক বিভাগ কমার্স বিভাগ ) এই পর্যায়ে সকল শিক্ষার্থীরা দশটি বিষয় নিয়ে অধ্যায়ন করবে।
১৫। শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান বিভাগ মানবিক বিভাগ এবং কমার্স বিভাগ পছন্দ করতে পারবে একাদশ শ্রেণীতে গিয়ে।
১৬। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে আলাদা দুটি পরীক্ষা নেওয়ার পর পরীক্ষার ফলাফল যোগ করে সমন্বয়ে রেজাল্ট দেওয়া হবে এইচএসসি পরীক্ষা।
১৭। উঠে যাচ্ছে গ্রেট পদ্ধতি।
১৮। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে তিনটি স্তরে।যেমন; ১। ত্রিভুজ, ২। বৃত্ত ,এবং ৩। চতুর্ভুজ
১৯। নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সপ্তাহিক দুই দিন ছুটি থাকবেন শুক্রবার ও শনিবার মূল্য।
বাংলাদেশের শিক্ষানীতিতে ২০২৩ সালের নতুন শিক্ষাক্রম বিস্তারিত তথ্যের পরিবর্তন হলে জানানোর চেষ্টা করবো ।
নতুন শিক্ষা কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে কিভাবে
আমরা আগে যে নিয়মে পরীক্ষার ফলাফল পেতাম যেমন গ্রেড সিস্টেম বা ডিভিশন সিস্টেম। এগুলো আর থাকছে না এই ক্ষেত্রে এখন কোন সিস্টেম থাকছে সেটা জানবো। নতুন শিক্ষা কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে কিভাবে এই বিষয় নিয়ে অভিভাবকদের মনে অনেক প্রশ্ন।
ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে মোট দশটি বিষয় আছে এবং আগের নিয়মে পরীক্ষার পর যে রেজাল্ট সিট ছাত্র-ছাত্রী পেত সেটা আর থাকছে না। নতুন শিক্ষা কারিকুলামে ছাত্র-ছাত্রী দশটি বিষয়ের মার্কশিট হাতে পাবেন কিন্তু কিভাবে বুঝবেন মূল্যায়ন করা হয়েছে। যদি দেখেন একটি বিষয়ে আপনার সন্তান ত্রিভুজ পেয়েছে তাহলে বুঝবেন তার যোগ্যতা অনেক ভালো করেছে।
যদি দেখেন আপনার সন্তান বৃত্ত পেয়েছে তাহলে বুঝবেন সেই বিষয়ের মাঝামাঝি যোগ্যতা অর্জন করেছে। মানে সব কিছু সেই ছাত্র বুঝতে পারিনি অনেক কিছু বুঝতে পেরেছে আর কিছু বুঝতে পারেনি। আর যদি দেখেন কোনো বিষয়ে চতুর্ভুজ তাহলে বুঝবেন তার সেই বিষয়ে কোনো যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনাই। মানে সেই বিষয়ে কোন কিছুই বুঝতে পারেনাই বা শিখতে পারেনাই।
তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত মূল্যায়ন হবে শিখন কালীন মূল্যায়ন, মানে এখানে কোন পরীক্ষা নেই, এখানে শিখন কালীন মূল্যায়ন হবে। চতুর্থ শ্রেণী হতে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঁচটি বিষয় থাকবে এই পাঁচটি বিষয়ের কিছু অংশ হবেন শিখন কালী মূল্যায়ন। শিখন কালী মূল্যায়ন হলো দলগত কাজ কেমন শিখছে কতটুকু শিখছে ইত্যাদি। পুরো বছরব্যাপী শিখন কালীনমূল্যায়ন করা হবে। সেইটা শিখন কালীন।
বাকি অংশের মূল্যায়ন হবে পরীক্ষার ভিত্তিতে মানে সামষ্টিক মূল্যায়ন। নতুন শিক্ষা কারিকুলামে মূল্যায়ন হবে দুই ভাবে যেমন,১। শিখন কালীন মূল্যায়ন ২। সামষ্টিক মূল্যায়ন।
নতুন শিক্ষা কারিকুলামে মূল্যায়ন হবে কিভাবে আসা করি বুঝতে পেরেছেন।
শিখন কালীন মূল্যায়ন কাকে বলে
শিখন কালীন মূল্যায়ন বলতে বোঝায়, আপনি যখন কোন বিদ্যালয়ে শিখছেন, কতটুকু শিখেছেন ,কোন বিষয়ের উপর আগ্রহ আছে কি না, ক্লাসে আপনি কেমন ব্যবহার করছেন, এবং দলগত কাজ এর মধ্যে আপনার যোগ্যতা কতটুকু এসব গুলোর মূল্যায়ন করা হবে। এই শিখন কালীন মূল্যায়নটি পুরো বছরব্যাপী মূল্যায়ন করা হবে
সামষ্টিক মূল্যায়ন কি?
নির্দিষ্ট সময় শেষে ছাত্রছাত্রী কতটুকু যোগ্যতা অর্জন করেছে এ বিষয়টি মূল্যায়ন হবে। একটি হবে ৬ মাস পরে, এটি হলো ( সামষ্টিক মূল্যায়ন ১ )। এখানে ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা অর্জনের মাত্রা যেটা আছে এটা যাচাইয়ের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। কারণ এইটার ভিত্তিতে শিখন প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর একটি হবে শিক্ষা বছর শেষে সেটা হল (সামষ্টিক মূল্যায়ন ২)।
সহজে বলা যায় সামষ্টিক মূল্যায়ন হলো আগের পরীক্ষার নামান্তর তবে এটার মধ্যে পার্থক্য থাকবে। এখানে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিখন প্রক্রিয়ার মূল্যায়ন করা হবে। আর চতুর্থ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঁচটি বিষয়ে থাকবে এই পাঁচটি বিষয়ের কিছু অংশ শিখন কালীন মূল্যায়ন হবে আর বাকি অংশের মূল্যায়ন হবে সমষ্টিক মূল্যায়ন মানে পরীক্ষার মাধ্যমে।
মাধ্যমিক পর্যায়ে যে দশটি বিষয় থাকবে
মাধ্যমিক পর্যায়ে সকল ছাত্র-ছাত্রীর জন্য যে দশটি বিষয় অধ্যয়ন করানো হবে সে বিষয়গুলো হলো।
১। ভাষা ও যোগাযোগ
২। গণিত ও যুক্তি
৩। জীবন ও জীবিকা
৪। সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব
৫। পরিবেশ ও জলবায়ু
৬। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
৭। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
৮। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা
৯। মূল্যবোধ ও নৈতিকতা
১০। শিল্প ও সাংস্কৃতি
নতুন শিক্ষা কারিকুলামে ত্রিভুজকে যে ভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে
নতুন শিক্ষা কারিকুলামে মূল্যায়ন ত্রিভুজ প্রক্রিয়া বলতে বোঝায়, কোন শিক্ষার্থী যদি কোন বিষয়ের পরীক্ষার রেজাল্ট মার্কশিটে ত্রিভুজ পেয়ে থাকে তাহলে বুঝবেন সেই শিক্ষার্থী সে বিষয়ে ভালো নাম্বার পেয়েছেন। মানে সেই শিক্ষার্থী সেই বিষয় সম্পর্কে ভালো জেনেছে, বুঝেছে এবং শিখেছেন। আগে যেমন শিক্ষার্থীরা ভালো রেজাল্ট করলেA+ পেতো তেমনি, ভালো রেজাল্ট করলে শিক্ষার্থী ত্রিভুজ পেয়ে থাকবে। এইটা হল ত্রিভুজ প্রক্রিয়া সর্বোচ্চ রেজাল্ট।
নতুন শিক্ষা কারিকুলামে বৃত্তকে যে ভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে
নতুন শিক্ষাকারিকুলামে মূল্যায়ন বৃত্ত প্রক্রিয়া বলতে বোঝায়, কোন শিক্ষার্থী যদি কোন বিষয়ের পরীক্ষার রেজাল্ট মার্কশিটে বৃত্ত পেয়ে থাকে তাহলে বুঝবেন সেই শিক্ষার্থী সেই বিষয়ে খুব ভালো নাম্বার পাইনি। মানে সে শিক্ষার্থী সে বিষয় সম্পর্কে কিছু অজানা রয়েছে খুব ভালো করে বুঝতে পারেনি বা শিখতে পারেনি। আগে যেমন শিক্ষার্থীরা A- মাইনাস পেতো ঠিক তেমনি, এইটা বৃত্ত প্রক্রিয়া। এটা হল বৃত্ত প্রক্রিয়া বা মিডিয়াম রেজাল্ট
নতুন শিক্ষা কারিকুলামে চতুর্ভুজকে যে ভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে
নতুন শিক্ষা কারিকুলামে মূল্যায়ন চতুর্ভুজ হলো, কোন শিক্ষার্থী যদি কোন বিষয়ের পরীক্ষার রেজাল্ট মার্কশিটে চতুর্ভুজ পেয়ে থাকে তাহলে বুঝবেন, সে শিক্ষার্থী সে বিষয়ে ভালো নাম্বার পায়নি মানে ৩৩ পেয়েছে। সেই শিক্ষার্থী সে বিষয়ে সম্পর্কে কিছু বুঝতে পারেনি বা কিছু শিখতে পারেনি। এটা হলো চতুর্ভুজ প্রক্রিয়া বা সর্বনিন্ম রেজাল্ট বলে গণ্য হয়েছে।
মন্তব্য: শিক্ষাটা হচ্ছে অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান। বাস্তবে প্রয়োগ করে কোন সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারাটা হলে শিক্ষা। শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হল আপনাকে সমাজের জন্য যোগ্য করে গড়ে তোলা। নতুন শিক্ষাক্রম ব্যবস্থাটা এমনই হতে যাচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রম ব্যবস্থায় কোন ছাত্র কোন বিষয়ের উপর দক্ষতা বেশি তাকে সেই বিষয়ের উপর যোগ্যতা অর্জন করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করা হবে । নতুন শিক্ষাক্রম ব্যবস্থায় কিছুটা সমস্যা থাকতে পারে সেটা শিক্ষকদের সমাধান করতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url