OrdinaryITPostAd

গাজরের পুষ্টিগুণ ও গাজর খাওয়ার উপকারিতা


গাজরের পুষ্টিগুন রয়েছে অনেক। গাজর খাওয়ার উপকারিতা যেমন রয়েছে, তেমনি অল্প কিছু গাজরের অপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। সুগন্ধি পাতার চাষ শুরু হলেও বর্তমানে পুষ্টিবিদরা পুষ্টি খুঁজে পেয়েছেন গাজরের মধ্যে। তাই গাজর পাতার চেয়ে মূলের চাহিদা বেশি।
গাজরের পুষ্টিগুণ ও গাজর খাওয়ার উপকারিতা


মূল জাতীয় সবজি গাজরের আদি নিবাস দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপে চাষ হতো। কিন্তু পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক গাজর উৎপাদন হয় চীনে।সর্দি কাশি সহ শীতকালীন রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে গাজর খেতে হবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
 গাজরের তরকারি খেলে পুষ্টির অপচয় হয়। তাই কাঁচা গাজর, গাজরের জুস ,গাজরের সুপ, এবং গাজরের সালাত করে খেলে পুষ্টিগুণ বেশি পাওয়া যায়। বিটা ক্যারোটিন যুক্ত গাজরে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকায় পুষ্টিবিজ্ঞানীরা গাজরকে রেখেছেন সুপার ফুডের তালিকায়।
  • গাজরের পুষ্টিগুণ ।
  • গাজর খাওয়ার উপকারিতা ।
  • গাজরের অপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ।
  • গাজর খেলে কি ত্বক ফর্সা হয় ।
  • গাজর প্রতিদিন কতটুকু খাওয়া যাবে ।

ভূমিকা

গাজরের পুষ্টিগণ সম্পর্কে আজ বিস্তারিত আলোচনা করব। সুস্থ থাকতে আমাদের নিয়মিত সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। শীত মৌসুমে অনেকের প্রিয় সবজি গাজর। গাজরকে শীতকালীন সুপার ফুড ও বলা যেতে পারে। গাজরকে রান্না অথবা কাঁচা অথবা গাজরের জুস, গাজরের সুপ ইত্যাদি করে খাওয়া যায়।


 শরীরকে সুস্থ রাখতে, সতেজ রাখতে গাজর খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা। কাঁচা গাজরের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, মিনারেল, ফাইবার, অল্প পরিমাণ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন । এ গাজর খেলে হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে, হার্ট ভালো রাখে, দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে, চুলকে ভালো রাখে, ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ইত্যাদি।

গাজরের পুষ্টিগুণ

গাজরে অনেক পুষ্টি রয়েছে। আজ আপনাদের মাঝে গাজরের পুষ্টিগুণ এবং গাজরের মধ্যে যেসব উপাদান রয়েছে সেগুলো তুলে ধরবো। নিচে গাজরের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পড়ুন।

প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরে আছে ৫৭ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, প্রোটিন ১২ গ্রাম, স্নেহ ,০.২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট. ১২ .০৭ গ্রাম, খনিজ,০. ৯ গ্রাম, ভিটামিন বি ২. ০৫ গ্রাম, ভিটামিন সি ৭. 2 মিলিগ্রাম, লৌহ, ২.২ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ৫৩৩ মাইক্রগ্রাম, ভিটামিন বি6 ০. ২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই,. ০৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন কে ১৬. ৮ মাইক্রগ্রাম, ফসফরাস, ৪৪. ৮ মিলিগ্রাম ফাইবার ১.৭ গ্রাম গাজরের মধ্যে আরো রয়েছে সুগার।

গাজর খাওয়ার উপকারিতা

গাজরের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে এবং গাজর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ক্যান্সার প্রতিরোধক গাজর: গাজরে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি6, এবং বায়োটিন এর মধ্যে আলফা ক্যারোটিন, বিটা ক্যারোটিন, থাকার কারণে আমাদের শরীরে ক্যান্সার ঠেকাতে করতে সহায়তা করে। গাজরে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে আমাদের শরীর থেকে ফ্রি রেডিক্লেস দূর করতে সাহায্য করে। ফলের নিয়মিত গাজর খেলে কোলন ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি: আপনি যদি প্রতিদিন অর্ধেক অথবা ১টি করে কাঁচা গাজর খেতে পারেন তাহলে আপনার দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পাবে। গাজরের বিটা ক্যারোটিন থাকায় দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। আমাদের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। কিন্তু গাজরে ভিটামিন এ থাকার কারণে আমরা যদি প্রতিদিন একটি করে গাজর খায় তাহলে আমাদের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

ত্বকের উপকারিতা: আমরা সকলে কমবেশি জানি কাঁচা ফল জাতীয় কোন কিছু খেলে ত্বক এবং শরীর ভালো থাকে। তার মধ্যে গাজর অন্যতম। ত্বকের জন্য গাজর খুব উপকারী একটি খাবার।

 যারা চিন্তা করছেন অল্প বয়সে হাত-পা গলা এবং শরীরের চামড়া জড়োভাব চলে আসছে তারা অবশ্যই গাজর খাবেন। কারণ গাজরে থাকা বায়োটিন স্কিনকে অনেক বেশি গ্লো দেয় এবং ফ্লোলেস স্ক্রিনের জন্য গাজর খুব উপকারী ।

ওজন কমানোর জন্য গাজর: ওজন কমানোর জন্য গাজর খুব উপকারী খাবার কারণ গাজরের সাথে ফাইবার আছে এবং মেটাবলিজম এড়াতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন একটি করে অথবা অর্ধেক করে গাজর খাওয়া ভালো। একটি মিডিয়াম সাইজের গাজরের রয়েছে ১.৭ গ্রাম ফাইবার এই কারণে গাজর খেলে আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে।

বাচ্চাদের জন্য গাজর: গাজর বাচ্চাদের জন্য খুব উপকারী একটি সবজি কারণ গাজরের মধ্যে মিনারেলস আছে। যেসব বাচ্চারা একদম খেতে চায় না সেসব বাচ্চাদের গাজরের সুপ বানিয়ে খাওয়াতে পারেন বা নুডুলস এর সাথে গাজর দিয়ে রান্না করে খাওয়ার অভ্যাস করাতে পারেন তাহলে বাচ্চার খাওয়ার আগ্রহ বাড়বে এবং বাচ্চার খিদা মন্দা ভাব দূর হবে।

চুলের উপকারিতা: বর্তমানে বিভিন্ন সমস্যার কারণে অল্প বয়সে চুল নষ্ট হয়ে যায় তারা প্রতিদিন একটি করে গাজর খেতে পারেন। কারণ গাজরে রয়েছে বায়োটিন। বায়োটিন থাকার কারণে চুলকে অনেক বেশি সুন্দর করে এবং চুলকে ভালো রাখে এবং চুলে পুষ্টিযোগাতে সহায়তা করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: গাজরের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সর্দি কাশি দূর করতে সাহায্য করে গাজরের ফাইবার থাকার কারণে কোলন পরিষ্কার রাখে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি: যাদের হজমে সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই প্রতিদিন খাবার তালিকায় অল্প করে হলেও গাজর রাখবেন।

স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়: যারা সপ্তাহে ছয়টি গাজর খেয়েছেন তাদের স্টকের সম্ভাবনা অর্ধেক কমে এসেছে । এটি হারবার বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় দেখা গেছে সুতরাং আমরা খাবারের তালিকায় অবশ্যই গাজরকে প্রাধান্য দিয়ে থাকব।

রাতকানা রোগের উপকারিতা: গাজরের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, যা আমাদের রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। গাজরে আরো রয়েছে বিটা ক্যারোটিন যা আমাদের শরীরের লিভারে গিয়ে ভিটামিন এ ,তে পরিণত হয় এবং তা ভিটামিন এ ,টা আমাদের চোখের রেটিনাতে যাই এবং রাতকানা রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

উচ্চ রক্তচাপ কমায়: উচ্চ রক্তচাপের জন্য গাজর কিভাবে আমাদের সহায়তা করে। গাজোরে রয়েছে ফাইবার এবং পটাশিয়াম আমেরিকান হার্ড অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে র্যেসব খাবারে পটাশিয়াম রয়েছে সেই সব খাবার খাবেন তার মধ্যে গাজর রয়েছে । পটাশিয়াম ব্লাড ভেসেল নিয়ন্ত্রণ করে এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।

হৃদ যন্ত্র সচল রাখে: হৃদযন্ত্র সচল ও সুস্থ রাখতে গাজরের ভূমিকা রয়েছে। যদি আপনি শারীরিক কর্মঠ থাকতে পারেন এবং আপনার পর্যাপ্ত ঘুম ও টেনশন মুক্ত থাকতে পারেন তাহলে আপনার হৃদ যন্ত্র সুস্থ থাকবে। এছাড়াও আপনাকে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে এগুলোর মধ্যে গাজর অন্যতম।

 কারণ গাজরের রয়েছে বিটা ক্যারোটিন ,আলফা ক্যারোটিন ও প্রোটিন ইত্যাদি ।এই উপাদান গুলো ধ্বনি হৃদ যন্ত্রের মধ্যে কোলেস্টেরলের ক্ষতিকর পদার্থগুলো জমতে দেয় না। ফলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে ফলে হৃদ যন্ত্র সুস্থ থাকে।

হাড় মজবুত রাখে: গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে এবং অল্প পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস । যা আমাদের হাড়ের গ্রোথ এবং হাড়কে মজবুত করতে সাহায্য করে । আমাদের হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়ার মতো রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে এই রঙিন সবজি গাজর।

দাঁত ভালো রাখে: গাজরে রয়েছে আন্টি অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি। ভিটামিন সি আমাদের শরীরের কাটা ছেঁড়া দ্রুত সারতে সাহায্য করে। তেমনি দাঁতের গোড়ায় এবং মাড়িতে ব্লিডিং হলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং দাঁতের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে।

লিভার ভালো রাখে: গাজরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ রয়েছে যা শরীরের ক্ষতিকর পদার্থগুলো বের করতে সাহায্য করে। গাজর খেলে লিভারের পিত্ত এবং ফ্যাট কম করতে সাহায্য করে। আমরা যদি প্রতিদিন একটি করে কাঁচা গাজর খেতে পারি তাহলে লিভারের প্রদাহ ও ফোলা ভাব কমে যায় ।এছাড়াও লিভারের হেপাটাইটিস সিরোসিস এর মত বিভিন্ন সমস্যা থেকে লিভারকে রক্ষা করে।

গাজরের অপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

গাজরের যেমন প্রচুর উপকারিতা রয়েছে তেমনি গাজরের অপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে আসুন অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন।

  • গাজর হল একটি বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার যা আপনার শরীরে ভিটামিন এ, এর অভাব পূরণ করে। কিন্তু আপনি যদি এটি খুব বেশি পরিমাণ খান তাহলে এটি আপনার শরীরকে ফ্যাকাসে করে দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত গাজর খেলে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে কারণ গাজরে চিনির মাত্রা বেশি থাকে।
  • মাত্র অতিরিক্ত গাজর খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে ,গ্যাসের সমস্যা হতে পারে ,ডায়রিয়া হতে পারে, পেট ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে।
  • গর্ভবতী মহিলাদের বেশি গাজর খাওয়ার ফলে মায়ের দুধের স্বাদ পরিবর্তন হতে পারে।
  • আপনি যদি বেশি পরিমাণ গাজর খান তাহলে আপনার শরীর ফ্যাকাসে হয়ে যেতে পারে।

গাজর খেলে কি ত্বক ফর্সা হয়

পুষ্টিবিজ্ঞানের বলছেন গাজরের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ,ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে। গাজরে এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে এবং এন্টিএজিক ক্ষমতা রয়েছে যা বয়সের ছাপ দূর করে ত্বককে করে তুলে উজ্জ্বল এবং লাবণ্যময়। গাজর খেলে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে।

 এছাড়াও গাজরে প্রচুর পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন থাকায় আমাদের শরীরে লিভারে যাওয়ার পর ভিটামিন এ ,তে রূপান্তরিত হয়। গাজরের ভিটামিন এ থাকার কারণে তাদের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব দূর করে এবং ত্বককে করে সতেজ ও টক্সিন মুক্ত রাখে।

গাজর প্রতিদিন কতটুকু খাওয়া যাবে র্প্রতিটি জিনিসের পরিমাণ রয়েছে। গাজরে প্রচুর ভিটামিন রয়েছে বলে আমরা বেশি খেলে উপকার হবে এমনটা নয়। একটি মানুষ প্রতিদিন ১টি থেকে ২ টি গাজর খেতে পারেন তাহলে শরীরের জন্য উপকার।

মন্তব্য

আমরা ইচ্ছা করলে প্রাকৃতিকভাবেএই রঙিন সবজি গাজর আমাদের খাবার তালিকায় সুপার ফুড হিসেবে রাখতে পারলে অবশ্যই আমাদের শরীরের অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তাহলে আমরা ঔষধের ওপর নির্ভর না করে আমাদের চারিপাশের সবজি ও ফল গুলো খেয়ে সুস্থ থাকতে পারি। গাজর তার মধ্যে অন্যতম একটি খাবার।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url